ফিউজারিয়াম ঢলে পড়া (Fusarium wilt) : রোগের কারণ ও লক্ষণ : ফিউজারিয়াম অক্সিস্পোরাম এফ. এসপি. লাইকোপারসিসি (Fusarium oxysporum f. sp. lycopersici) নামক ছত্রাকের আক্রমণে হয়। চারা গাছের বয়স্ক পাতাগুলো নিচের দিকে বেঁকে যায় ও ঢলে পড়ে। ধীরে ধীরে পুরো গাছই নেতিয়ে পড়ে ও মরে যায়। গাছের কাণ্ডে ও শিকড়ে বাদামি দাগ পড়ে। গাছে প্রথমে কাণ্ডের এক পাশের শাখার পাতাগুলো হলদে হয়ে আসে এবং পরে অন্যান্য অংশ হলুদ হয়ে যায়। রোগ বৃদ্ধি পেলে সব পাতাই হলুদ হয়ে যায় এবং অবশেষে সম্পূর্ণ শাখাটি মরে যায়। এভাবে পুরো গাছটাই ধীরে ধীরে মরে যায়। সম্ভব হলে ফরমালিন দিয়ে মাটি শোধন করতে হবে; নীরোগ বীজতলার চারা লাগাতে হবে; আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করতে হবে; জমিতে চুন প্রয়োগ করতে হবে; জমিতে উপযুক্ত পরিমাণে পটাশ সার প্রয়োগ করলে রোগ অনেক কম হয়; শিকড় গিট কৃমি দমন করতে হবে কারণ এটি ছত্রাকের অনুপ্রবেশে সাহায্য করে; রোগের আক্রমণ দেখা দিলে ব্যভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম অথবা কিউপ্রাভিট প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম হিসাবে মিশিয়ে চারার গোড়ায় স্প্রে করতে হবে। ঢলে পড়া (Bacterial wilt): রোগের কারণ ও বিস্তার : রালসটোনিয়া সোলানেসিয়ারাম (Ralstonia solanacearum) নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হয়। গাছের পরিত্যক্ত অংশ, মাটি ও বিকল্প পোষকে এ রোগের জীবাণু বেঁচে থাকে। সেচের পানি ও মাঠে ব্যবহৃত কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। উচ্চ তাপমাত্রা (২৮-৩২০ সেলসিয়াস) ও অধিক আর্দ্রতায় এ রোগ দ্রুত ছড়ায়। রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার : গাছ বৃদ্ধির যে কোনো সময় এ রোগ হতে পারে এবং ব্যাপক ক্ষতি করে। আক্রান্ত গাছের পাতা ও ডাঁটা খুব দ্রুত ঢলে পড়ে এবং গাছ মরে যায়। গাছ মরার পূর্ব পর্যন্ত পাতায় কোনো প্রকার দাগ পড়ে না। মাটির ওপরে আক্রান্ত গাছের গোড়া থেকে সাদা রঙের শিকড় বের হয়। রোগের প্রারম্ভে কাণ্ডের নিম্নাংশ চিরলে এর মজ্জার মধ্যে কালো রঙের দাগ দেখা যায় এবং চাপ দিলে তা থেকে ধূসর বর্ণের তরল আঠাল পদার্থ বের হয়ে আসে। এ তরল পদার্থে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাছাড়া আক্রান্ত গাছের গোড়ার দিকের কা- কেটে পরিষ্কার গ্লাসে পানিতে ডুবিয়ে রাখলে সাদা সুতার মতো ব্যাকটেরিয়াল উজ বের হয়ে আসতে দেখা যায়। রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করতে হবে; বুনো বেগুন গাছের কাণ্ডের সাথে কাক্সিক্ষত জাতের টমেটোর জোড় কলম করতে হবে; শস্য পর্যায়ে বাদাম, সরিষা, ভুট্টা ফসল চাষ করতে হবে; রোগাক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র মাটিসহ তুলে ধ্বংস করতে হবে; টমেটোর জমি স্যাঁতস্যাঁতে রাখা যাবে না; হেক্টর প্রতি ২০ কেজি স্টেবল ব্লিচিং পাউডার শেষ চাষের সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে; স্ট্রেপ্টোমাইসিন সালফেট (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন) ২০ পিপিএম অথবা ক্রোসিন এজি ১০ এসপি ০.৫ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৪-৭ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
Source : Krishi Batayan
Saif Abdullah Mustafin
Agriculture Extension Officer
Bagmara Rajshahi
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস